সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
করোনার প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিতে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের খ্রিস্টান পল্লীগুলোতে নেই উৎসবের আমেজ। বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের লোকজন এ বছর উৎসবপর্বের আচার কমিয়ে কেবল ঘরোয়া প্রার্থনা ও অনাড়ম্বর আয়োজনে কেক কেটে দিবসটি উদযাপন করবেন বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) গির্জাগুলোতে করোনামুক্তি ও দেশের মঙ্গল ও উন্নতি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ৬ উপজেলার দুর্গম, পাহাড়ি টিলায় এখনো বসবাস করেন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে গারোদের সংখ্যাই বেশি। তাছাড়া কিছু খাসিয়াও রয়েছে। ২০১১ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী জেলায় প্রায় ১ হাজার ৪৬৪টি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর লোকদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি পরিবার খ্রিস্টান ধর্ম পালন করেন। তারা প্রতি বছর যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে উৎসবে মাতেন।
২৫ ডিসেম্বরের সাধারণত প্রথম প্রহরেই কীর্তন ও সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে উৎসবে মাতেন তারা। সকালে সবাই মিলে মিশে নির্ধারিত বাড়িতে ভোজগ্রহণ করেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কমিয়ে আনা হয়েছে। রাতে কেবল ঘরোয়াভাবে কীর্তন পরিবেশন হবে এবং ২৫ ডিসেম্বর সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘরোয়া আয়োজনে খাওয়া-দাওয়া হবে।
সূত্র জানায়, অন্যান্য বছর তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের কড়ইগড়া, চানপুর বড়দিন উপলক্ষে উৎসবে সাজে। আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয় বসতবাড়িতে। কিন্তু এ বছর উৎসবের আমেজ নেই এই পল্লীগুলোতে।
এদিকে খ্রিস্টান সম্প্রদায় যাতে নির্বিঘ্নে বড়দিন পালন করতে পারে এ উপলক্ষে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করেছে। গির্জাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।
উন্নয়নকর্মী ইলিমেন্ট হাজং বলেন, শুধু উন্নয়ন-অবকাঠামো-সহায়তা থেকেই আমরা বঞ্চিত নই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে অংশিদারীত্ব ও মতামত প্রদানের জন্য যে দাবি জানিয়ে আসছি তারও সুযোগ দেয়া হয় না। আমাদের এলাকার বাঙালি অধ্যুষিত জনপদে যে পরিমাণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সহায়তা প্রদান করা হয় তার বিন্দু পরিমাণও আমরা পাই না। আমরা যুগযুগ ধরে এভাবে রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও বঞ্চিত হচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বের জীবনধারা এখন থমকে আছে। তাই আমাদের উৎসবও এবার কমিয়ে আনা হয়েছে। আমরা ঘরোয়াভাবে উৎসব পালন করব। করোনা মহামারি থেকে মানবজাতির মুক্তি কামনা করব।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ জানান, বড়দিন উপলক্ষে আমরা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সকল নাগরিকদের শুভেচ্ছা জানাই। তারা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের আচার পালন করতে পারেন আমরা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছি।